নোয়াখালী-৩ আসনে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে মামুনুর রশিদ কিরণ
আবু রায়হান সরকার
নোয়াখালী জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন হচ্ছে নোয়াখালী-৩। বেগমগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৭০ নম্বর আসন এটি। কোনো এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত প্রবাসী অধ্যুষিত এ আসনে টানা গত দুইবার রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। টানা দুই টার্ম এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় এ আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ মানুষের পছন্দের জনপ্রিয়তার শীর্ষে বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ।
জানা যায়, নোয়াখালী-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৯৮। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ দুই হাজার ৬৮৬ ও নারী দল১ লাখ ৮৯ হাজার ৬১২। পঞ্চম থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ছিল বিএনপির দখলে। দশম ও একাদশে আওয়ামী লীগ। আসনটিতে গেলো দুইবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মামুনুর রশিদ কিরণ। ব্যক্তি ইমেজেও অন্য দলের প্রার্থীর চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শুধু এলাকার উন্নয়নই নয়,বিপদ-আপদে এলাকার মানুষের পাশে থেকে অধিকাংশ সময় দেন নির্বাচনী এলাকায়।যার কারণে গত ১০ বছরে তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগের ভোটও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ দলের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা,মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, রাস্তাঘাট,স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা, মডেল মসজিদ নির্মাণ,গরীব মেধাবী ছেলেমেয়েদের নিজ খরচে পড়ালেখা করানো, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতার কন্যার বিয়েতে আার্থিক সাহায্য প্রদান, অসুস্থ রোগীকে আর্থিক সহায়তা। এছাড়াও ধর্ষণ সন্ত্রাস, মাদক সন্ত্রাস, ইভটিজিংরোধে বিভিন্ন সামাজিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ। নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিশেষ ভুমিকা পালন, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়াসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করে জনপদের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন প্রিয় ব্যক্তি।
দলমত নির্বিশেষে উন্নয়ন ও দলের স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি কিরণই একমাত্র দলের যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা। নোয়াখালী-৩ আসনটি কোনো একসময়ে বিএনপির দুর্গ হলেও এমপি কিরণের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এ আসন এখন আওয়ামীলীগের দুর্গে পরিণত হয়েছে।১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মূলত এ আসনটি বিএনপির একক দখলে ছিল। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ দুই দফায় এ আসনটি বিএনপি নেতা বরকত উল্যা বুলুর একক দখলে ছিল। মাঝখানে ২০০১ সালে বিএনপি থেকে বরকত উল্যা বুলু টেকনোক্র্যাট কোটায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তখন শিল্পপতি পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাসেম বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এ আসনে একবার এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় বরকত উল্যা বুলু প্রথমে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী পরে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ আওয়ামী লীগ থেকে অধ্যাপক মো. হানিফ এ আসনে নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে একবার আহম্মদ নজির ও একবার বোরহান উদ্দিন এমপি নিবার্চিত হন। তবে তখন নোয়াখালীর এ আসনটি দু্ইভাগে বিভক্ত ছিল। এরপরে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুইবার জাসদ থেকে রাজনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান এমপি নিবার্চিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মামুনুর রশিদ কিরণ।
১৯৭৩ সালের পর দীর্ঘ সময় এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল না। ২০১৪ সালে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজনীতিবিদ মামুনুর রশিদ কিরণ এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গেলো ১০ বছরে নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ আসনে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এছাড়াও তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে কিরণের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি নিয়মিত এলাকায় থাকেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সর্ম্পক থাকার কারণে তিনি বেশির ভাগ মানুষের কাছে প্রিয় রাজনীতিবিদ। এক সময়ে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত এখন বেগমগঞ্জ উপজেলায় আনাচে কানাচে উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট স্কুল কলেজ মাদরাসাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন ভবনে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন অবহেলিত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তার সহযোগিতায় উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডে তিনিও সাধারণ মানুষের আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেছেন।
১৯৯১ সাল থেকে টানা পাঁচবার এই আসনে জয়ী হয়েছে বিএনপি। তবে সময়ের ব্যবধানে পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে। এখন দলগত ভোট আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমান সমান। তবে গত দুই টার্ম এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন এবং ব্যক্তি ইমেজের কারণে এ আসনে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নিয়ে এলাকা ঘুরে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। ভোটাররা বলছেন, ব্যক্তি প্রার্থীর ক্ষেত্রে বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ কিরণের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। অত্যন্ত মিশুক বলে পরিচিত এমপি কিরণের আসনে রয়েছে বেশ সুনামও। স্থানীয় ভোটারদের অভিমত হচ্ছে এলাকায় কাজ বেশি করেছেন মামুনুর রশিদ কিরণ (বর্তমান এমপি)। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভোটারদের মতে, মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে তিনি একটা শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন এলাকার মানুষের হৃদয়ের গভীরে।
এদিকে, এ আসনে জাতীয় পার্টি বা অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা কখনোই মানুষের মনে ঠাঁই করতে পারেনি। তাদের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রমও দৃশ্যমান নেই। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এ আসনে বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলুই মূলত একক প্রার্থী। সে লক্ষ্যে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এ বিএম জাফর উল্লা, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের ভাই মিনহাজ ইউ আহমেদ জাবেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু, জাতীয় পার্টি ফজলে এলাহি সোহাগ মিঞা, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেত্রী লুৎফুন্নাহার মুন্নি। তবে আওয়ামী লীগ মুন্নীকে ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে মাত্র ৫ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারান।
বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, সত্যিকারভাবে বিএনপি-জামায়াত সরকার অবহেলিত বেগমগঞ্জ উপজেলায় কোনো উন্নয়নই করেনি। তারা লুটপাতে ব্যস্ত ছিলো। তাদের সরকারের টিআর-কাবিখা দিয়ে অস্ত্র কিনতো। প্রতিটি ইউনিয়নে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিলো। তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ ঘরবাড়ি করতে পারতো না। চাদাঁ দিতে হতো। কেউ ভয়ে ঘুমাতে পারতো না। বর্তমান সরকার দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের সরকার। গেলো ১০ বছরে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে প্রায় ১৫শ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। প্রতিটি রাস্তাঘাট,স্কুল,কলেজ,মসজিদ, মন্দির,মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নতুন ভবন করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এখনকার জনগণ মানুষকে পুঁড়িয়ে মারার দল বিএনপি-জামায়াতকে পছন্দ করে না। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে মানুষ তাদের ক্ষমতায় চায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জননেতা ওবায়দুল কাদের আমাকে পুনরায় নমিনেশন দিলে বেগমগঞ্জ উপজেলাকে স্মার্ট বেগমগঞ্জ উপজেলায় রূপান্তর করবো ইনশাআল্লাহ। আশা করি নেত্রী আবারও আমার উপর সেই আস্থা রাখবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় বিএনপি।
Like this:
Like Loading...
Share News