দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ আসনটি জেলা সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা নিয়ে গঠিত। একটি পৌরসভা ও দুটি উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনের পরিধি। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একাধিক প্রার্থী রয়েছে এ আসনে।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আসনটি বাগিয়ে নিতে পারেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় প্রার্থী না হলে আর নির্বাচনে বিএনপি অংশ না দিলে এমনটা আশঙ্কা করছে বিশ্লেষকরা।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। তখন থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আছে। জেলা সদর হওয়ায় আসনটি খুবই গুরুত্ব বহন করে। এরশাদের শাসনামলে এ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতার পর এ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের মরহুম আবদুল মালেক উকিল। তিনি বঙ্গবন্ধুর সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আবদুল মালেক উকিল আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নোয়াখালীর এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর দৃশ্যত প্রার্থী দুর্বলতায় আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যায় আসনটি।
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মো. শাহজাহান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। দীর্ঘদিন আসনটিতে সংসদ সদস্য থাকায় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে নোয়াখালী-৪ আসন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন এ আসনে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও আসনটি ধরে রাখে আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে বিএনপির দুর্গখ্যাত নোয়াখালী-৪ আসন এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে বিএনপির দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আসনটিতে বিএনপির প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৯। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৭৯ হাজার ২২৪ ও নারী ২ লাখ ৬৫ হাজার ১০৫।
সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়ে একরামের প্রভাব অনেকটা ভাটা পড়েছে। তৈরি হয়েছে বিপক্ষ বলয়। প্রভাব বাগিয়ে নিতে সক্রিয় সংসদ সদস্য একরামের বিপক্ষ গ্রুপ। আওয়ামী লীগের এই মুখোমুখি অবস্থানে ভোটের মাঠে সুদিন ফিরেছে বিরোধী শিবির বিএনপিতে। একক প্রার্থী, ঐক্য, দীর্ঘদিনের জনসমর্থন এবং ক্ষমতাসীনদের বিভাজন এখানেই বিএনপির বড় শক্তি। এ অবস্থায় নোয়াখালী-৪ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীরা রয়েছেন দোটানায়। কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন। তবে আওয়ামী লীগে সংসদ সদস্য একরাম বিরোধী একটা বড় অংশ প্রার্থী পরিবর্তন চায়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ছাড়াও এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আবদুল মালেক উকিলের ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন লাতু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ইকবাল মাহমুদ বাবলু। এছাড়াও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি জয় বাংলা স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান করার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। এছাড়াও মনোনয়ন চাইতে পারেন মহাজোটের শরিক বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানও।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, নেত্রী মনোনয়ন দিলে আমি প্রার্থী হব। না হলে না। আমাকে নেত্রী জেলার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সাংগঠনিক কাজ করছি। সংগঠন গোছাচ্ছি। শেষ বয়সে নেত্রী যদি নির্বাচন করতে বলেন, করব। অথবা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে কাজ করব।
দলের মনোনয়নের বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য এ আসনের বাসিন্দা নন। তৃণমূলের দাবি, নোয়াখালী সদর ও সুবর্ণচরের বাসিন্দাদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দিক। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ও নোয়াখালী মানুষের অভিভাবক ওবায়দুল কাদের এ দুই উপজেলা থেকে যাকেই মনোনয়ন দেবেন, আমরা তাকে বিজয়ী করে আনব। আর আমাকে যদি যোগ্য মনে করে নেত্রী ও দল মনোনয়ন দেয় তা হলে জয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।
বর্তমান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, অবহেলিত নোয়াখালী-৪ আসনকে আমি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পরিকল্পনায় সাজিয়েছি। বিশেষ করে সুবর্ণচরকে উন্নয়নের মডেল উপজেলায় রূপান্তর করেছি। এ আসনের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমিও তাদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। দলের তৃণমূলের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা ছিল এবং থাকবে। যেকোনো সমস্যায় আমি তাদের পাশে আছি। আমি মনোনয়ন চাইব। নেত্রী যদি মনোনয়ন দেন তা হলে নির্বাচন করব। নেত্রী যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, এ আসনের দলের টানা তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের একক প্রার্থী মো. শাহজাহান বলেন, নির্বাচনি প্রস্তুতির বিষয়টি এখন আমাদের মাথায় নেই। অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে আন্দোলনে ব্যস্ত। এ দাবি কীভাবে আদায় করা যায়, সেটি ভাবছি। যে পদ্ধতিতে এখন নির্বাচন হয়, এটাতে আমরা যাব না। এটি নিয়ে কথা বলেও লাভ নেই।
Like this:
Like Loading...
Share News