আবু তাহের
২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরমপূরন নীতিমালা অনুযায়ী, বিজ্ঞান বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য ৪র্থ বিষয়সহ বোর্ড ফি ১৬২৫ টাকা ব্যাবহারিক ফি সহ কেন্দ্র ফি ৫১৫ টাকা আর ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগ ও মানবিক বিভাগের ৪র্থ বিষয়সহ বোর্ড ফি ১৫৩৫ টাকা ব্যাবহারিক ফি সহ কেন্দ্র ফি ৪৮৫ টাকা নির্ধারন করেছে সরকার। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী পরিক্ষায় সব বিষয়ে কৃতকার্য হয়েও বোর্ড নির্ধারিত ফি, কোচিং ফি সহ ৫০০০/৫৫০০ টাকা নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অকৃতকার্যদের বিষয় প্রতি অতিরিক্ত আরো ১০০০ টাকা করে দিতে হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কৌশলে এ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে উপজেলার চন্ডিপুর মনসা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে যানা যায়, এবছর বিদ্যালয়টিতে এসএসসির ফরম পূরন করেছে ১০৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫০ জন সব বিষয়ে কৃতকার্য হয়। বিজ্ঞান বিভাগে নেয়া হয় ২১৯০ এবং মানবিক ও ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে নেয়া হয় ২০৭০ টাকা। অন্যদিকে ১ বিষয়ে ২৮, দুই বিষয়ে ১৪ জন, তিন বিষয়ে ১২ জন, চার বিষয়ে ১ জন, পাঁচ বিষয়ে ১ জন, ছয় বিষয়ে ১ জন অকৃতকার্য হয়। এদিকে অকৃতকার্যদের ফরম পূরনে বোর্ড নির্ধারিত ফির সাথে প্রতিবিষয়ে ১০০০ টাকা হারে মোট এক লক্ষ এগারো হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক । এছাড়া কোচিং ফি বাবদ নিচ্ছেন আরো দুই হাজার চার শত টাকা ।
রহিমা বেগম নামের একজন অভিভাবক বলেন, সন্তানদের ছোট রেখে তাদের বাবা মারা যায়। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন তিনি। ছেলের পরীক্ষার ফরম পূরনে মনসা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দিয়েছেন সাত হাজার টাকা। আয়েশা আক্তার নামে আরেকজন অভিভাবক জানান, একই বিদ্যালয়ে তার সন্তানের পরীক্ষার ফরম পূরন করতে দিয়েছেন দশ হাজার টাকা। অভিভাবকদের আভিযোগ নির্ধারিত পুরো টাকা দিতে না পারলে ফরম পূরন করে না প্রধান শিক্ষক। এছাড়া উপজেলার নিচহরা উচ্চ বিদ্যালয়, সাউদেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়, বিঘা আহম্মদিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা ঘুরে অভিভাবকদের একাধীক অভিযোগ পাওয়া যায় ।
চন্ডিপুর মনসা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুনূর রশিদ অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এগুলো মিথ্যা, অভিভাবকরা কত কথাই বলবে, এতে কান দিবেন না।
নিচহরা উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক ইউনূছ দেওয়ান বলেন, নীতিমালা দিয়ে দেশ চলে না, ফরম পূরনের সময় আমরা দু—চার পয়সা বেশি নিচ্ছি, এটাও আপনারা জানতে আসছেন, জেনে কি করবেন? ও লিখবেন ? আপনারা লেখেন, লিখলে কিছুই হবে না।
পারুল বেগম নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ের ফরম পূরন করতে ৫ হাজার টাকা আনতে বলেছে। ৩ হাজার টাকা আনছি কিন্তু স্যার নিচ্ছেনা।
নিচহরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বিল্লাল হোসেন মজুমদার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এসএসসির ফরম পূরনে বিজ্ঞান বিভাগের ২২০০ টাকা এবং ব্যাবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ২১০০ টাকা এবং কোচিং ফি বাবদ ৩০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা ১—২ বিষয়ে ফেল করেছে তাদের কাছ থেকে বিশেষ ক্লাস নেয়ার জন্য চাপ দিয়ে কিছু টাকা নেয়া হচ্ছে।
সাউদেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কাশেম বলেন, এবার নির্বাচনী পরীক্ষায় এসএসসির ফরম পূরনে বিজ্ঞান বিভাগের ২২৫০ টাকা এবং ব্যাবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ২১৫০ টাকা এবং কোচিং ফি বাবদ ৩০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
বিঘা আহম্মদিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ ইউসুফ বলেন, বিজ্ঞান,ব্যাবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে নিচ্ছেন তিন হাজার টাকা টাকা এবং কোচিং ফি বাবদ ৭০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোনাজের রশিদ বলেন, এসএসসির ফরম পূরনে বিজ্ঞান বিভাগের ২১৪০ টাকা এবং ব্যাবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ২০২০ টাকা নির্ধারন করে দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। বোর্ড নির্ধারিত ফি”র বেশি টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Like this:
Like Loading...
Share News