নোয়াখালীর চর অঞ্চল জুড়ে এক দশক আগেও শীতের সকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তো গাছিরা। শীতের সকালে জেলা প্রত্যান্ত অঞ্চল গুলোতে চোখে পড়তো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। শীতের শুরুতেই দেখা যেতো অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের কদর বেড়ে গেছে।
নোয়াখালীর সদর উপজেলা, সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানিগন্জ ও হাতিয়া অঞ্চলের গ্রাম গুলোতে রাস্তার পাশে ও বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে খেজুর গাছ কাটার প্রতিযোগিতায় ব্যাস্ত হয়ে পড়তো গাছিরা। খেজুর গাছ পরিস্কার করার জন্য দা, পাটের দড়ি, মাটির কলস, বাঁশের চটি ব্যবহার করতো। তবে গ্রামবাংলার এ দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন পুরো শীত পড়া শুরু করলেও মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ থেকে সুমধুর রস সংগ্রহ করতে বা গ্রামের হাটবাজারে বিক্রি করতে চাষিদের তেমন দেখা যাচ্ছে না। শীত মৌসুমে সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে শেষ করা যাবে না।
একসময় নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষিনীদের ঘরে ঘরে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি, মোয়া, গুড়, পাটালি, সুস্বাদু পিঠাপুলি ও নানা রকমের খাবার তৈরির মহা উৎসবের ধুম পড়ত। খেজুরের রসে ভেজা বিভিন্ন ধরনের পিঠার স্বাদই আলাদা। রস আর গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যেতনা। অথচ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই খেজুর গাছ আজ অবহেলায় অযত্নে বিলপ্তির পথে। যে পরিমানে খেজুর গাছ নিধন হচ্ছে সে অনুপাতে রোপন করা হচ্ছে না। এর প্রধান কারন গ্রাম অঞ্চল থেকে অবাধে খেজুর গাছ নিধন। এতে নোয়াখালীতে দিনে দিনে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে খেজুরের গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামীণ জনপদে উৎসবমুখর সেই পরিবেশ তেমন চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। সুবর্নচর উপজেলার এক চাষি বলেন, খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় চরজব্বর খেজুর রসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল।
কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ১০ টাকা এখন সে রসের হাঁড়ির দাম বেড়ে হয়েছে দু’শ থেকে তিন’শ টাকা। শুকনা মৌসুমে ব্রিক ফিল্ড গুলোতে খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ব্যাপক ভাবে পুড়ানো হয়। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন বিলুপ্তি হচ্ছে মধুবৃক্ষ খেজুরের রস।
Like this:
Like Loading...
Share News